উইলিয়াম শেক্সপীয়র এর জীবনী
বিশ্বসাহিত্যের বিরল কয়েকটি প্রতিভা তাদের যুগোত্তীণ অবদানের জন্য সময়ের সীমা অতিক্রম করে মহামানব রূপে চিহ্নিত হয়েছেন, উইলিয়ম উইলিয়াম শেক্সপীয়র এর জীবনী তাঁদের মধ্যে অন্যতম ।
বিশ্ববাসী আজো বিস্মিত ও ধন্য হয়ে যায় প্রায় চারশো বছরের পূর্বেকার এই সাহিত্য কর্মীর সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে। তার নাট্যকর্মের এক একটা বাক্য দিয়ে সাহিত্যের ব্যাখ্যাকারীরা সমালোচনা কারীরা কতো বিরাট এবং কতো বহুমুখি অর্থ করতে পারেন, যা আজ পর্যন্ত আর কারো সাহিত্য কর্মে সম্ভব হয়নি। সারা বছর বোধ হয় এমন একটা দিন পাওয়া যাবে না, যেদিন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে বা স্থানে তাঁর নাটক অভিনীত না হচ্ছে। একাধারে এমন জনপ্রিয় এবং গভীর জ্ঞানের অধিকারী অথচ দার্শনিক সাহিত্য জগতে আর জন্মাননি।
১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে এপ্রিল ওয়ারউইকশায়ারে অ্যাডন নদীর তীরে স্ট্রাটফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন শেক্সপীয়র। তাঁর বাবার নাম ছিল জন শেক্সপীয়র এবং মায়ের নাম মেরী আর্ডেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে উইলিয়ম বাদে আর সকলেই মারা গিয়েছিল শৈশবে প্লেগ রোগের আক্রমণে।
উইলিয়মের শৈশব ও বাল্যকাল সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে এটুকু জানা যায় যে তাঁর জন্ম হয়েছিল প্রাচীন ইংরাজ জোতদার পরিবারে।
তাঁর বাবা স্ট্রাটফোর্ডের অল্ডারম্যান এবং কর্পোরেশনের বেলিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সব সরকারী পদে থাকার সময়ে মঞ্চাভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা জানা যায়। বাইরে থেকে যে সব নাট্যদল শহরে আসত তিনি তাদের সরাসরি অর্থসাহায্য পেতে সাহায্য করতেন।
অনুমান করা যায় যে পিতার এই নাট্যপ্রীতি পুত্র উইলিয়মের মধ্যেই সঞ্চালিত ও বিকাশলাভ করেছিল।
অনেকে বলেন, জন শেক্সপীয়র পেশায় ছিলেন কসাই। তবে স্ট্রাটফোর্ড শহরের পরিসংখ্যান থেকে নির্ভরযোগ্য ভাবে যা জানা যায় তা হল, জন ছিলেন একজন দস্তানা প্রস্তুতকারক এবং নরম চামড়ার তৈরি দ্রব্যাদির ব্যবসায়ী।
স্ট্রাটফোর্ডের পরিবেশে ছেলেবেলা থেকেই যে উইলিয়ম মঞ্চে অভিনীত নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এভাবেই কবিতা ও অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ জন্মে উঠেছিল তাঁর।
পড়াশোনার সঙ্গে বাবার ব্যবসাও দেখাশোনা করতেন উইলিয়ম । শেক্সপীয়র সম্পর্কে প্রচলিত গল্প হল যে তিনি নাকি স্ট্রাটফোর্ড এলাকায় হরিণ চুরি করে বেড়াতেন। একবার হরিণ চুরির অপরাধে শাস্তি এড়াবার জন্যই নাকি লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সেখানে নাট্যশালায় যারা থিয়েটার দেখতে আসতেন তাঁদের ঘোড়া রক্ষণাবেক্ষণ এবং তদারকি করাই ছিল তাঁর জীবিকা। এসব গল্প নিছকইগল্প, এগুলোর কোন বাস্তব ভিত্তি আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।
আঠারো বছর বয়সেই শেক্সপীয়র বিয়ে করেছিলেন অ্যান হ্যাথাওকে৷ জন শেক্সপীয়রেরই একজন জোতদার বন্ধুর কন্যা ছিলেন অ্যান।
কবিতা ও অভিনয়ের প্রতি ছেলেবেলা থেকেই আকর্ষণ ছিল উইলিয়মের। লন্ডনে এসে তিনি ঢুকে পড়লেন একটা নাটকের দলে। এখানে গোড়ার দিকে তাঁর কাজ ছিল ফাইফরমাস খাটা আর নাটক লেখা।
সেই কালে নাটক লিখিয়েদের খুব একটা মর্যাদা ছিল না। থিয়েটারের আর পাঁচজন সাধারণ কর্মীর মতই তাদের গণ্য করা হত।
পুরনো নথিপত্র থেকে জানা যায় যে উইলিয়ম গ্লোব বা অন্য কোন থিয়েটারে অভিনয় করেননি।
রিচার্ড বারবেজ, এডওয়ার্ড অ্যালিন এবং পরবর্তীকালে লর্ড চেম্বারলেনের কোম্পানির সঙ্গে উইলিয়ম শেক্সপীয়র কাজকর্ম করেছেন।
লন্ডনে জীবনের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই উইলিয়ম নিজের খরচে দুটি কবিতা সঙ্কলন পুস্তকারে প্রকাশ করেন।
১৫৯৩ খ্রিঃ ভেনাস ও অ্যাডোনিস এবং ১৫৯৪ খ্রি : দ্য রেপ অব লুক্রেসি প্রকাশিত হলে কবি হিসেবে তিনি স্বীকৃতি লাভ করেন। উইলিয়মের লেখা নাটক মঞ্চে সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বই আকারে প্রকাশের কোন আগ্রহ তাঁর ছিলনা। কোন প্রকাশকও এগিয়ে আসেনি।
তবে উইলিয়ম তাঁর সহজাত প্রতিভাবলে একজন সাধারণ কর্মী থেকে নিজেকে তুলে আনতে পেরেছিলেন লন্ডনের অন্যতম প্রধান নাট্যদলের মালিকানার অংশীদার হিসেবে। গ্লোব থিয়েটারের নয়জন অংশীদারের মধ্যে উইলিয়ম ছিলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি।
১৫৯৬ খ্রি : উইলিয়মের জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। তাঁর একমাত্র পুত্র হ্যামলেট মাত্র এগার বছর বয়সে আকস্মিকভাবে মারা যায়।
এই দুর্ঘটনা তাকে চরম আঘাত হেনেছিল। তিনি এরপর লন্ডনের বাস উঠিয়ে চলে আসেন স্ট্রাটফোর্ডে।
এখানেই ১৫৯৭ খ্রিঃ তিনি একটি মস্ত বাড়ি কিনে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে থাকেন। নতুন বাড়ির নামকরণ করেন নিউ প্রেস। আট ন বছর লন্ডনে ছিলেন উইলিয়ম। এই সময়ে একের পর এক নাটক লিখেছেন আর ব্যস্ত থেকেছেন সেগুলো মঞ্চস্থ করার কাজে। স্ট্র্যাটফোর্ডেই উইলিয়ম তাঁর দুই মেয়ে সুশান ও জুডিথের বিয়ে দেন যথাক্রমে ১৬০৮ ও ১৬১৬ খ্রিঃ ।
জগদ্বিখ্যাত এই মহান নাট্যকার ১৬১৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৩শে এপ্রিল ৫২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। তাঁকে তাঁর নিজ শহরে ছোট্ট এক গীর্জার সামনে ধর্মপ্রচার বেদীর পাশে সমাধিস্থ করা হয়। শেক্সপীয়রের নাটকের প্রথম সঙ্কলন ফার্স্টফোলিও প্রথম প্রকাশিত হয় ১৬২৩ খ্রিঃ। তিনি মোট ৩৪ টি নাটক রচনা করেন
সেগুলি হল ঃ
ঐতিহাসিক নাটক : চতুর্থ হেনরী, চতুর্থ হেনরী দ্বিতীয় ভাগ পঞ্চম হেনরী, অষ্টম হেনরী।
ঐতিহাসিক বিয়োগান্ত নাটক : ষষ্ঠ হেনরী ১ম, ২য়, তৃতীয় ভাগ, তৃতীয় রিচার্ড, দ্বিতীয় রিচার্ড, কিং জন।
বিয়োগান্ত নাটক : টাইটাস এড্রোনিকাস, রোমিও ও জুলিয়েট, জুলিয়াস সিজার, হ্যামলেট, ওথেলো, কিং লিয়ার, ম্যাকবেথ, অ্যান্টনি ও ক্লিয়োপেট্রা, কোরিওল্যানাস, টাইমন অব এথেন্স।
হাস্যরসাত্মক নাটক : দি কমেডি অব এররস্, দি টেমিং অব দ্য শ্রু, দি টু জেন্টলম্যান অব ভেরোনা, লাভস লেবার লস্ট, মিড সামার নাইট্স ড্রিম, মার্চেন্ট অব ভেনিস, মাচ এ্যাডো এবাউট নাথিং, অ্যাজ ইউ লাইক ইট, দ্য মেরী ওয়াইভস অব উইন্ডসর, টুয়েলভথ নাইট, ট্রয়লার্স অ্যান্ড গ্রেসিডা, অলস্ ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল, সিম্বেলিন, দি উইন্টার্স টেল, দ্য টেম্পেস্ট, দ্য টু নোবল কিন্সমেন।
শেক্সপীয়রের কাব্যের মধ্যে রয়েছে: ১৫৪ টি সনেট, ভেনাস অ্যান্ড অ্যাডোনিস এবং দি রেপ অব লুক্রেসি এবং একটি শোকসঙ্গীত দ্য ফিনিক্স অ্যান্ড টার্টল ।