ভূমিকা: বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এলাহাবাদের দ্বিতীয় সন্ধি স্বাক্ষর করে (১২ আগস্ট, ১৭৬৫ খ্রি.)। এই সন্ধির দ্বারা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটকে কারা ও এলাহাবাদ অঞ্চল এবং বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের অঙ্গীকার করে। বিনিময়ে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত অধিকার প্রদান করেন।
দেওয়ানি লাভের গুৰুত্ব :
1. কোম্পানির বৈধতা প্রতিষ্ঠা : দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলা তথা ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আইনগত বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে নবাবের সংগ্রাম করার ক্ষমতা লোপ পায়। এর ফলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হয়।
2. নবাবের ক্ষমতা হ্রাস : ইংরেজ কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলায় নবাবের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল। নবাব সম্পূর্ণভাবে ইংরেজ কোম্পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে নামসর্বস্ব শাসকে পরিণত হয়েছিলেন।
3. দ্বৈতশাসনের সূচনা : কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় নবাবের হাতে ছিল নিজামত বা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব। আর কোম্পানির হাতে ছিল দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত অধিকার। বাস্তবে নবাবের ছিল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব, অপরপক্ষে কোম্পানির হাতে ছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা।
4. অর্থনৈতিক গুরুত্ব : কোম্পানির দেওয়ানি লাভের আর্থিক গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মুঘল সম্রাটকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা এবং বাংলার নবাবকে বার্ষিক ৫৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর উদ্বৃত্ত রাজস্ব কোম্পানির হাতে থাকে। এই বিপুল অর্থকে কাজে লাগিয়ে ইংরেজরা তাদের বাণিজ্যকে বৃদ্ধি করেছিল।
5. ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের প্রসার : কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলার রাজস্বের লভ্যাংশ ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হত। ফলে ইংল্যান্ডের ধনভাণ্ডার পূর্ণ হয়েছিল – যা সেখানকার শিল্পবিপ্লবে সহায়ক হয়েছিল। অনেক ঐতিহাসিক বলেন, বাংলার এই সম্পদ ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল।