Translate

মনি আর নেই

                          

                   আলিউল আজম মালিথ্যা (রুবেল)


 প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমি অফিসের জন্য বের হলাম | কিন্তু শুনতে পেলাম যে, রাস্তায় বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে | তাই আজ আমাকে বস্তির রাস্তা দিয়ে যাত্রা শুরু করতে হলো | আমি যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম | কে যেন আমাকে কাকামনি কাকামনি বলে ডাকছে | পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা ছোট মেয়ে | আমি মেয়েটার কাছে গেলাম | ছোট মেয়েটির আমাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, তুমি কেন বাড়িতে আসো না কাকামনি ? আমি তোমার জন্য রোজ রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে থাকি | মা কে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলে মা বলে, তুমি নাকি আর কখনো আসবেনা | কাকামনি চলোনা আমার সাথে বাড়ি | মেয়েটিকে দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হলো, তাই আমার অনিচ্ছা থাকা সত্বেও আমি মেয়েটির সঙ্গে তাদের বাড়ি গেলাম | ওদের বাড়ি টা অত্যন্ত দরিদ্রতাই পরিপূর্ণ কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন | সেখানে গিয়ে মেয়েটির মায়ের সাথে আমার দেখা হল | তার মায়ের মুখে জানতে পারলাম, মেয়েটির নাম মনি | মেয়েটি তার মায়ের একমাত্র অবলম্বন | মেয়েটির একটি কাকা ছিল, কিন্তু কয়েকদিন আগে সে একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে | শুনে ভীষণ দুঃখ পেলাম | আমার আর সেদিন অফিস যাওয়া হলো না | পরের দিন আমি যখন অফিসের জন্য বের হলাম, কেন জানি বস্তির রাস্তা দিয়ে গেলাম | দেখলাম ছোট্ট মেয়েটি আমার জন্য রাস্তার ধারে কতগুলি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে | আমি তার কাছে যেতেই সে ফুলগুলি দিয়ে বলল, কাকা মনি তুমি রোজ এই রাস্তা দিয়ে আসবে | আমি এই অসহায় মেয়েটির কথা অমান্য করতে পারলাম না | তাই আমি রোজ মেয়েটির জন্য বস্তির রাস্তা দিয়ে যেতাম | কিন্তু হঠাৎ একদিন মনি কে রাস্তার ধারে দেখতে পেলাম না | বাড়িতে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসবো, কিন্তু দেখা করা আর হলো না | কারণ অফিসের কাজে কদিনের জন্য আমাকে বাইরে যেতে হলো | পরে বাড়ি ফিরে এসে যখন আমি মনির সঙ্গে দেখা করবার জন্য তাদের বাড়িতে গেলাম, তখন দেখি তার মা বসে আছেন | আমাকে দেখে মুখে আঁচল দিয়ে কাঁদতে লাগলেন | আমি বললাম মনি কোথায় ? তখন তিনি বললেন মনি কাল রাত্রে তিন দিনের জ্বরে মারা গেছে | মারা যাওয়ার আগে মনি শুধু আপনার কথা বলছিল | এই বলে প্রচন্ড কাঁদতে লাগলেন | আমি বাড়ি ফিরে এলাম | এখন আর আমি বস্তির রাস্তা দিয়ে যাই না | কিন্তু আজও আমার কানে সেই ছোট্ট মেয়েটির কথা বাজে |