সৃষ্টি বাঁচলে তবেই কাটার অস্তিত্ব থাকবে- এমন কথাকে শিরোধার্য করেই বলতে হয় মনুষ্যজীবনে সভ্যতা-সংস্কৃতি ততদিনই টিকে থাকবে, যতদিন পর্যন্ত পরিবেশ থাকবে স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক। তাই মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব বিষয়টি এক অর্থে অভিনব।
কেবল বর্তমান সময় নয়, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে আঁকড়ে ধরেই মানবজীবনের অস্তিত্ব। আর এই অস্তিত্ব-অবস্থানে পরিবেশের ভূমিকা উজ্জ্বল। এক্ষেত্রে পরিবেশ হল উন্নতার স্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, অরণ্য ও প্রাণীর সহাবস্থান, পাহাড়-পর্বত কৃষিজমির স্বাভাবিক উপস্থিতি ইত্যাদি।
জেনে রাখা দরকার, মানুষের অস্তিত্ব নির্ভর করছে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বেঁচে থাকার ওপর। অর্থাৎ প্রাণকে ধরে রাখার জন্য অক্সিজেন, খাদ্যের সংস্থানের জন্য ফল শস্য- সবজি, গৃহস্থালির সাজ-সরঞ্জামের জন্য আসবাবপত্র, রাস্তাঘাট নির্মাণ থেকে মরদেহ দাহ পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই মানুষ উদ্ভিদ তথা পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল।
প্রাণী হিসেবে পৃথিবীতে মানুষ এককভাবে বাঁচতে পারে না। অন্যান্য প্রাণীর সহাবস্থানের প্রভাবও মানবজীবনে রয়েছে। যেমন—কৃষিক্ষেত্রে বলদ, পরিবহণে ঘোড়া, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় কাক-শকুন, ওষুধ প্রস্তুতিতে বিভিন্ন স্থল ও জলজ প্রাণী প্রভৃতি আবার মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন মেটায় এই অরুণ প্রাণীকূল।
আমরা জানি, পৃথিবীর তিনভাগ জল এবং একভাগ । স্থলভাগের মধ্যে আবার আছে পাহাড়-পর্বত, মালভূমি, সমভূমি, বনাঞ্চল প্রভৃতি। সুউচ্চ পর্বত যেমন অসংলগ্ন বায়ুর হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে, তেমনই কৃষি-শিল্প ও নিত্য প্রয়োজনে জলভাগের অত্যাবশ্যকীয় উপস্থিতি মানবজীবনকে সচল রাখে।
আবার, একজন ভূমিষ্ঠ শিশুকে সুস্থ-সতেজ-স্বাভাবিকভাবে গড়ে তুলতে গেলে সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের তৈরি সাংস্কৃতিক পরিবেশেরও একান্ত প্রয়োজন। সুস্থ, শিক্ষিত সাংস্কৃতিক পরিবেশ আগামী পৃথিবীর জন্য শুভ লক্ষণ।
সুতরাং, মানবজীবন আর পরিবেশ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রকৃতি যেমন মানুষকে সুস্থ ও সুন্দর করে রাখতে পারে, তেমনই মানুষই পারে স্বাভাবিক বসবাসের উপযোগী পরিবেশ ধরে রাখতে। তাই পরিবেশের ওপর যত্নশীল মানুষকেই হতে হবে।