মানুষ আর সুস্থ পরিবেশ অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। উভয়েই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশের ওপর নির্ভরতার দিক যদিও মানুষেরই, তবুও এই পরিবেশ | স্বাভাবিক রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং এই কারণেই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
কোনো প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশের বিবিধ উপাদানগুলির ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে, তখন মনে করা হয়। পরিবেশ দূষিত হয়েছে। জলদূষণ, বায়ুদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ, শব্দদূষণ, দৃশ্যদূষণ, তেজষ্ক্রিয়দূষণ পরিবেশদূষণগুলির মধ্যে অন্যতম।
জলের সঙ্গে মুষিত পদার্থ বা সার-কীটনাশক ইত্যাদি মিশে গিয়ে জল যখন তার স্বাভাবিক গুণাগুণ হারায়, তখন তাকে বলে জলদূষণ। এই দূষণের প্রতিকার - প্রথমত, কলকারখানার সুখিত, জল, অাশয়ে ফেলতে না-দেওয়া। দ্বিতীয়ত, কৃষিজমির বিখাত কীটনাশক মিশ্রিত জল পুকুর বা নদীতে না-ফেলা। তৃতীয়ত, সমস্ত জলাশয়কেই নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা।
কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়িয়া ধোঁয়া, কাঠকয়লার ে রাস্তাঘাটের ধুলো ইত্যাদির মিশ্রণে বায়ু যখন তার স্বাভাবিক গুণাগুণ হারায়, তখন তাকে বলে বায়ুদূষণ। এই দূষণের প্রতিকার হল- প্রথমত, ধোঁয়া-বর্ণিত উনুন, ব্যাটারিচালিত গাড়ি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত, রাস্তাঘটিকে সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তৃতীয়ত, সমস্ত গাড়িতেই দূষণ নিয়ন্ত্ৰণকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।
বিভিন্ন কৃত্রিম কারণ—যেমন, পলিথিন, কংক্রিটের টুকরো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া ইত্যাদির কারণে মৃত্তিকা যখন তার ধারণ ক্ষমতাকে হারায়, তখন বলা হয় মৃত্তিকা দূষিত হয়েছে। এই দূষণের প্রতিকার হল-প্রথমত, পলিথিনের ব্যবহার একেবারেই কর করে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, জমিতে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। তৃতীয়ত, গৃহস্থালি বা শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিনের জন্যাল একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
গাড়ির তীব্র হন, উচ্চস্বরে মাইক বা বক্স বাজানো, বিকট শব্দে বাজি ফাটানো শব্দদূষণের প্রধান কারণ, যা মানুষের শরীরে ও মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। শব্দদূষণ প্রতিরোধের উপায় হল- প্রথমত, গাড়িতে কোনো জোরালো হর্ন না বাজানো। দ্বিতীয়ত, উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকা। তৃতীয়ত, শব্দদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা।
পরিবেশ আমাদের, একে স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বও আমাদের। তাই পরিবেশকে ভালোবেসে বসবাসের উপযোগী করে রাখার দায়িত্ব মানুষের। এই কারণেই পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তোলা সামাজিক কর্তব্য। কারণ, পরিবেশ ছাড়া মানব জীবন অচল। সুতরাং, আমাদের সকলকেই পরিবেশ রক্ষা করে জীবন বাঁচানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।