বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৪২ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কশায়ার অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন কৃষক।
স্যার আইজ্যাক নিউটন মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেই তাঁর পিতা মারা যান। পুত্রের জন্মাবার পূর্বেই স্বামী মারা যাওয়ায় নিউটনের মা খুব আঘাত পান। দুঃখ ভুলতে স্বামীর নামানুসারেই তিনি পুত্রের নাম রাখেন আইজ্যাক নিউটন। নিউটনের মায়ের নাম ছিলো হ্যানা নিউটন। নিউটনের দাদার নাম ছিলো রবার্ট নিউটন। পৈতৃক সূত্রে নিউটন যথেষ্ট বিষয়-সম্পত্তির মালিক হন।
অল্প বয়সে স্বামীর মৃত্যু হলে নিউটনের মা স্থানীয় গির্জার এক ধনী পাদ্রীকে বিয়ে করেন। এই ঘরে আরো এক ছেলে ও দুই মেয়ে জন্মায়। মা হ্যানা বড় ছেলে নিউটনকে সংসার দেখাশুনার ভার দিলেন। কিন্তু নিউটনের ভালোলাগতো পড়াশুনা। তিনি রাতদিন প্রায় সারাক্ষণ পড়াশুনায় নিমগ্ন থাকতেন। সংসারের কাজকর্মে মোটেই মনোযোগ দিতে পারতেন না। এছাড়া জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে তিনি গবেষণা করতেন। কিছু আবিষ্কার করতে হবে—এই ছিলো তার নেশা। তিনি অল্প বয়সে একটা জলঘড়ি নির্মাণ করেন—প্রতিবেশিরা তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলো। তারা প্রায়ই এটা দেখে যেতো।
স্যার আইজ্যাক নিউটন ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও দ্বারা অনুপ্রাণিত হন নানাভাবে। গ্যালিলিও আবিষ্কৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মতো আর একটি প্রতিবিম্বিত দূরবীন তিনি তৈরি করেন। এই দূরবীনের সাহায্যে তিনি মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি লক্ষ্য। করতে পারতেন, যা তাঁর গবেষণার সহায়ক হতো।
স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৬৪ সালে ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে বি. এ. পাস করেন। এই সময় থেকেই শুরু হয় তাঁর উদ্ভাবনী শক্তির চরম বিকাশ। আধুনিক বিজ্ঞানকে পরীক্ষামূলক প্রমাণের সাহায্যে গ্যালিলিওর পর পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন।
১৬৬৭ সালে তিনি এম. এ. পাস করেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে স্যার আইজ্যাক নিউটন আলোকবিদ্যা, গতিবিদ্যা এবং গণিতেও তাঁর ভবিষ্যত শ্রেষ্ঠত্বের সূচনা করেন। তাঁর প্রিয় বিষয় ছিলো অংক, জ্যোতির্বিদ্যা এবং বলবিদ্যা।
এক গরমের দিন বিকেলবেলা। নিউটন তার গ্রামের বাড়ির বাগানে চুপচাপ বসে আছেন। এমন সময় পাশের আপেল গাছ থেকে একটা আপেল বসে তাঁর পায়ের কাছে পড়লো। নিউটন হঠাৎ ভারতে লাগলেন আপেলটা মাটিতে পড়লো কেন ? উপরেও তো উড়ে যেতে পারতো।
গভীর চিন্তার পর তাঁর মনে হলো নিশ্চয় পৃথিবী এই ফলকে তার দিকে আকর্ষণ করছে। তাই ফলটা এভাবে মাটিতে পড়েছে। পরে গভীর গবেষণার পর তিনি আবিষ্কার করেন এই আকর্ষণ শক্তি। এর ফলে তিনি আরো আবিষ্কার করেন মধ্যাকর্ষণ শক্তি। পৃথিবী শুধু নয়, গ্রহ-নক্ষতারা একে অপরকে আকর্ষণ করে। নিউটনের এই আবিষ্কার বিশ্বের এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা হিসাবে পরিগণিত।
স্যার আইজ্যাক নিউটন তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে অর্জিত সিদ্ধান্তগুলো 'প্রিন্সিপিয়া নামক এক বইতে সন্নিবেশিত করে তা পুস্তকাকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে ১৬৮৭ সালে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ 'প্রিন্সিপিয়া তিনখণ্ডে প্রকাশিত হয়।
নিউটন ছিলেন চিরকুমার। ১৭২৭ সালে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্বয়ং বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন স্যার আইজ্যাক
নিউটনকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। তার জ্ঞানের গভীরতা সম্বন্ধে ভক্তরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, জ্ঞান সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে এতোকাল শুধুমাত্র কয়েকটা নুড়ি পাথর কুড়িয়েছি, আসল সমুদ্রের রহস্য কিছুই তেমন জানতে পারিনি।